রংপুর থেকে সোহের রশিদ।- মাছ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পর্ণ হলেও রংপুর বিভাগে প্রতি বছর মাছের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রি টন। ফলে আমিষের সংকটে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা দিন-দিন বাড়ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে নদী-নালা, খাল-বিলে পানি না থাকায় মাছের এ ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে মৎস্য বিভাগ। তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, এই খাতকে যান্ত্রিকিকরণ করা হলে দ্রæত এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব।
রংপুর মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় দেড় কোটির বেশি মানুষের বাস। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মিলে একজন মানুষের গড়ে প্রতিদিন মাছের চাহিদা ৬০ গ্রাম। সেই হিসেবে একজন মানুষের প্রতিবছর মাছের চাহিদা প্রায় ২২ কেজি। কিন্তু চাহিদা অনুয়ায়ী মাছ খেতে পারছে না এই অঞ্চলের মানুষ। ফলে সারা বছরই মাছের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। প্রতিবছর এ অঞ্চলের মাছের চাহিদা ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। সেই হিসেবে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। রংপুরের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৫২ গ্রাম মাছ খেতে পারছে।
সূত্র মতে, এ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন তিস্তা অববাহিকার পলিমাটি অঞ্চল এবং দিনাজপুরের কাঁকরযুক্ত বালি অঞ্চল। তিস্তার পলিমাটি অঞ্চল প্রধানত বন্যা প্লাবিত হওয়ায় জলজ প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে সর্বদাই বিবেচিত হয়ে আসছে। এ অঞ্চলে অতীতে ৩০০ প্রজাতির মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। কালের বিবর্তনে জলবায়ুর পরির্বতন ও পরিবেশগত কারণে প্রায় ১৩৭ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে । এছাড়া অর্ধশত প্রাজাতির মাছ এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাবে স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। দিনাজপুর অঞ্চলের কাঁকর ও বালিযুক্ত মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা কম। এরপরে তিস্তার উজানে বাঁধ নির্মিত হওয়ায় এ অঞ্চলে জলশূন্যতা বিরাজ করছে। সর্বত্রই প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
রংপুর মৎস্য অধিদপ্তররের অতিরিক্ত পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এ্ই অঞ্চলে মাছের ঘাটতি পূরণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মৎস্য অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও মেরামত, সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া মৎস্যকে যান্ত্রিকীকরণের প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে মাছের ঘাটতি দূর করে যাবে।
এদিকে, ২৩ জুলাই/২২ খ্রিঃ শনিবার সকালে রংপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের সভাপতিত্বে এক সংবাদ সম্মেলনে রংপুর জেলার মৎস্য উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান মানিক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে রংপুর জেলায় ৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর জলায়তনে ৪২ হাজার ৩৩৯টি সরকারি-বেসরকারি দিঘী, ২০১৩ হেক্টরের ২৫৯ সরকারি-বেসরকারি বিল, ৫৩ হেক্টরের ৯৭টি বরোপিট, ৬টি ছোট-বড় নদী ও ২২ হাজার ২৫ হেক্টর প্লাবনভূমি আছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বর্তমানে জেলায় ২১টি হ্যাচারি ও ৮১২টি মৎস্য নার্সারি পরিচালিত হচ্ছে।
Leave a Reply