প্রতিনিধি পীরগঞ্জ (রংপুর)।- পীরগঞ্জে করোনাকালে খামারীদের প্রনোদনার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এক গ্রাম্য পশু চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কয়েকজন খামারীর টাকা আত্ম¥সাতের অভিযোগ করায় মাহবুব মিয়া নামের এক খামারীকে উপজেলা সদরের একটি বাসায় আটকে রেখে নির্যাতন করে ৩’শ টাকার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার মামলা হলে পুলিশ ওই পশু চিকিৎসককে গ্রেফতার করে। গত শনিবার উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের মেহেদুল ইসলামের ছেলে পশু চিকিৎসক মতলুবর রহমান (২৯) গ্রেফতার হয়েছে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ দফতর সুত্রে জানা গেছে, করোনাকালে দেশের খামারীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার লাইভষ্টক এন্ড ডেইরি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলডিডিপি) এর আওতায় প্রনোদনা হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নগদ একাউন্ট নম্বরে টাকা প্রদান করে। এরমধ্যে গাভী ও লেয়ার মুরগী, ব্রয়লার মুরগী এবং সোনালী মুরগীর খামারীদেরকে ওই প্রনোদনা দেয়া হয়। উপজেলায় ১ম পর্যায়ে ১ হাজার ৫’শ ১৬জন এবং ২য় পর্যায়ে ৫’শ ৯২জনকে প্রনোদনা দেয়া হয়। এতে প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।রংপুরের পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মাঠপর্যায়ে খামারীদের তালিকা প্রস্তুত করতে প্রাণি সম্পদ বিভাগের মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োজিত এলএসপি’র (লাইভষ্টক সার্ভিস প্রোভাইডার) সদস্যদের নাম তালিকা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।ওই এলএসপির সদস্যরা কৌশলে প্রকৃত খামারীসহ ভুয়া খামারীর নাম তালিকা করতেই ঘাপলার আশ্রয় নেয়। পাশাপাশি তারা খামারীদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে মোবাইলের নগদ একাউন্ট খোলার কথা বলে নতুন সীম কার্ড কিনে এলএসপির অধিকাংশ সদস্য সীমগুলো নিজেদের কাছে রেখে দেয়। একপর্যায়ে ওইসব সীমে নগদ একাউন্টে আসা টাকা এলএসপির সদস্যরা তুলে আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাসহ অফিসের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীও প্রনোদনার টাকা নয়ছয়ে জড়িত বলে খামারীরা অভিযোগ করেছেন। তালিকা অনুযায়ী তদন্ত করা হলে প্রায় কোটি টাকা নয়ছয়ের ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
এদিকে উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের বেতকাপা গ্রামের মাহবুব মিয়া নামের এক খামারীর মোবাইল সীম ব্যবহার করে একই ইউনিয়নের পশু চিকিৎসক মতলুবর রহমান প্রনোদনার টাকা আত্মসাত করে। এ ছাড়াও ওই পশু চিকিৎসক আরও কয়েকজনের টাকা আত্মসাত করায় খামারী মাহবুব মিয়া ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই পশু চিকিৎসক গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে তাকে (মাহবুব মিয়া) উপজেলার চন্ডীপুর গ্রামের মাহবুবার রহমানের উপজেলা সদরের বাসায় ডেকে আনে। পরে ওই বাসায় প্রনোদনার টাকা নিয়ে যেন কোন অভিযোগ না করা হয় সে জন্য মাহবুব মিয়াকে শাসানোর পরে ৩’শ টাকার ননজুডিশিয়াল ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়া হয়। ওই ঘটনায় খামারী মাহবুব বাদী হয়ে গত শনিবার পীরগঞ্জ থানায় ২ জন সহ আরো অনেকের নামে মামলা করেছেন। ওই ঘটনায় পুলিশ মামলার ১নং অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক মতলুবরকে গ্রেফতার করে।
এ বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে,মামলার পর প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, উপজেলা প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাঃ রোকন মিয়া এই প্রকল্প দেকভালের দায়িত্বে আছেন।তার পরামর্শে মাঠ পর্যায়ের এলএসপি কর্মীরা যে তালিকা দিয়েছে, সে অনুযায়ী প্রনোদনার টাকা এসেছে। তিনি বলেছেন,এ ব্যাপারে আমি জড়িত নই।
Leave a Reply