দিনাজপুর প্রতিনিধি।- পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে দেশে সংক্রমণের মতো বাড়ছে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা।
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সহিংসতারও ধরন বদলাচ্ছে। সাইবার ক্রাইমও বেড়েছে উদ্বেগজনভাবে। সরকারী কোন উদ্যোগই নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে পারছে না।
গত ১৯ নভেম্বর (শনিবার) বিকেলে দিনাজপুর নাট্য সমিতি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটির সদস্যবৃন্দের সাথে ‘আসুন নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা এবং সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলার শাখার সভাপতি কানিজ রহমান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সমাজে নারী ও কন্যার বিরুদ্ধে সহিংসতার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এর জন্য সামগ্রিকভাবে সামাজিক কাঠামোগুলোকে মূল্যায়ণ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীবিদ্বেষ ছড়ায় এমন কনটেন্টগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বাড়ায়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম। সহ-সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারা সানুর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটির জেলা শাখার আহবায়ক মো. সফিকুল ইসলাম, কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হাবিবুল ইসলাম বাবুল, ঈদগাহ্ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুর রহমান, রবিন্দ্র সম্মিলন পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি রবিউল আউয়াল খোকা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জেলা কমিটির সভাপতি সুলতান কামাল উদ্দিন বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক রহমতউল্লাহ্ রহমত, মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি মাহবুবা খাতুন, মিনতি ঘোষ, লিগ্যাল এইড সম্পাদক জিন্নুরাইন পারু, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা পলি, সদস্য গোলেনুর বেগম, মিনতি এক্কা প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিনের আন্দোলনে ক্রমান্বয়ে পথ চলতে চলতে রাষ্ট্র,সমাজ ও পরিবারে সর্বত্র নারী তার অবস্থান তৈরী করেছে। কিন্তু তারপরেও নারী ধর্ষণ, নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন সহিংসতার চিত্র আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের যে ভয়াবহ বাস্তবতা আমরা মোকাবেলা করছি তা আমাদের অনেক অর্জনকে ¤ø¬ান করে দেয়। মৌলবাদ ও সা¤প্রদায়িকতার ভয়াল থাবাকে বিনাশ করে নারী ধর্ষণ, নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন সহিংসতা বন্ধ করে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক আন্দোলন জোরদার করার পাশাপাশি সংগঠন ও সংগঠকসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
মতবিনিময় সভায় নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে ৬টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো-
বিচারহীনতার সংস্কৃতি পরিহার করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে, নারী কর্মীরা যাতে নীতি নির্ধারণীতে ভূমিকা রাখতে পারেন এবং নারীবান্ধব কাজের পরিবেশ তৈরী করা,
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের কাজ আরও দক্ষতার সাথে বহুমাত্রিক ও সৃজনশীলভাবে করতে হবে, সম্পদে নারী পুরুষের সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা বন্ধ করতে হবে।
Leave a Reply