আবু তারেক বাঁধন, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি।- ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে পাটের আঁশ ছাড়ানো, পাট ধোয়া ও শুকানোর কাজ পুরুদমে শুরু হয়েছে। পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। সকাল থেকে সন্ধা গড়া পর্যন্ত পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন তারা। সোনালী আাঁশের সোনালী রঙে ভরে গেছে কৃষকের ঘর। এলাকার কৃষক- কৃষানি রাস্তাঘাট, মাঠ, ক্ষেতের আল, ডোবায়, নদীর তীরে ও বাড়ির আঙিনায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামঞ্চলের জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ব্যাপকভাবে সোনালী আঁশের আবাদ হয়েছে। দেশে সার, বীজ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ কম ও অনুক‚ল আবহাওয়া থাকায় সোনালী আঁশের ফলন অধিক হচ্ছে। দেশের হাট-বাজারে পাটের দাম বেশি পাওয়ায় সোনালী আঁশের সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন স্থানীয় পাট চাষীরা এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
মৌসুমের শুরুতে পাট বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। ফলনও হয়েছে ভালো। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার গুলোতে প্রতি মন পাট তিন হাজার টাকা থেকে তিন হাজার দুইশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাইকাররা বাড়ি বাড়ি গিয়েও পাট কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাই ভালো ফলন ও আশানুরুপ দাম পেয়ে বিগত বছর গুলোতে লোকসানে পড়া কৃষকদের মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটে উঠেছে।
এ দিকে পীরগঞ্জ উপজেলার ভেমরাদহ নতুন হাট, শিতলপুর, কৈমারী, জাবরহাট, রনশিয়া ,বাগানবাড়ি, কাতিহার সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত কৃষক। তবে এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরই পাটের আঁশ ছাড়াতে দেখা যায়।
ভেমরাদহ নতুন হাট এলাকায় পাটের আঁশ ছাড়ানো ব্যস্ত রমিজা বলেন, আমরা এখানে কাজ করছি পাটখড়ির জন্য। পাটের আঁশ ছাড়ালে পাটখড়ি আমি পাব, আমরা দিনে পঞ্চাশ থেকে ষাঁট আঁটি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারি। এতে মালিকের লাভ, আমরাদেরও লাভ।
পাটচাষিরা মো. আলতাফুর রহমান, দোলোয়ার হোসেন ও মোজাহারুল হক জানান, প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, সেচ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, পাট কাটা, শুকানোসহ খরচ হবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় লাভ হবে ৫-৬ গুণ। গত বছর বিঘাপ্রতি ৭-৮ মণ পাট পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার ফলন ভালো হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণ পাট পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। পাট চাষীরা প্রতি মন পাট তিন হাজার দুইশত টাকায় পাট বিক্রি করেন তারা। এর আগে কখনো এত দামে পাট বিক্রি করেনি। এইবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাটের দাম ঠিক থাকলে আগামীতে পাটের চাষ আরো বাড়বে বলে আশা করেন তারা।
পীরগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর পাটের আবাদ হয়েছে ১৩০০ হেক্টর জমিতে। তন্মধ্যে দেশীয়, টোষা, ও অন্যান্য জাতের পাট রয়েছে। পাটচাষীরা গত বছরের তুলনায় এবার অনেক ফলনও বেশি এবং দামেও বেশি পাচ্ছেন। কৃষকদের যদি সার, ব্রীজ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা যেত তাহলে তারা পাট চাষে আরও আগ্রহী হতেন। পাটের বহুমুখি ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে পাটের সুদিন ধরে রাখা সম্ভব।
Leave a Reply