পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি।- ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এদিকে বাড়ী ঘরে লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪২ জনকে গ্রেফতার করেছে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ।
১৭ অক্টোবর/২১ খ্রি: রবিবার উপজেলার ১৩নং রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় করিমপুর মাঝিপাড়া নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে ওই সম্প্রদায়ের ১৫ থেকে ২০টি বাড়ি পুড়ে গেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত আরও ১০ থেকে ১২ টি বাড়ি-ঘরে। এছাড়াও লুটপাট করা হয়েছে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ গরু-ছাগল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে স্থানীয় পরিতোষ নামের এক কিশোরের আপত্তিকর পোষ্টকে কেন্দ্র করে রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় আশেপাশের এলাকা থেকে সাধারণ মানুষজন সেখানে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই কিশোররের বাড়ি থেকে কিছুটা অদূরে অন্য একটি পাড়ায় হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও ভাঙচুর ও লুটপাট চলতে থাকে। পরে পুলিশ সেখানে পৌঁছে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে পুড়ে যায় ১৫ থেকে ২০ টি বাড়ি। পীরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রতন চন্দ্র শর্মা জানিয়েছেন, খবর পেয়ে রংপুর মিঠাপুকর ও পীরগঞ্জের ৪টি ইউনিট রাত পৌনে নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে এক পাশে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না আনতেই অন্য দিকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্র্বৃত্তরা। এতে পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। আগুনে হিন্দু সম্প্রাদায়ের ১৫ থেকে ২০টি বাড়ি পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। এছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ১০ থেকে ১২টি বাড়ি। রংপুর জেলার সহকারী পুলিশ সুপার মিঠাপুকুর-রংপুর দায়িত্বরত সার্কেল-ডি কামরুজ্জামান জানান, স্থানীয় এক তরুণের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগের পর ওই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ তার বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেও দূরে ১৮-২০টি বাড়ি ঘরে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পীরগঞ্জের মাঝি পাড়ায় লাগা আগুনের কয়েকটি ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। নিন্দার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অপরদিকে ওই ঘটনায় ওই দিন রাতে রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায়সহ পুলিশ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় ১৮ অক্টোবর/২১ খ্রিঃ সোমবার রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আ: ওয়াহাব ভুঞা, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড: রেজাউল করিম রাজু, সহ-সভাপতি ছায়াদত হোসেন বাকুল, পীরগঞ্জ পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামিম, পীরগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিউর রহমান মন্ডল মিলন ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম সাদেক বিএসসি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ী, লুঙ্গি চাল প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সরেস চন্দ্র জানান, থানায় ২টি মামলা হয়েছে তবে এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত ছিল তাদেরকে ধরার জোর প্রচেষ্টা চলছে।
Leave a Reply