হারুন উর রশিদ।-রংপুরে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (০৯ মে) সকাল থেকে মরহুমের জন্মস্থান পীরগঞ্জ উপজেলার লালদীঘি ফতেপুরে তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
সকালে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে লালদীঘির ফতেহপুরে জয় সদনে প্রয়াত বিজ্ঞানীর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু করা হয়। প্রথমে সমাধিতে জেলা প্রশাসন, পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, রংপুর জেলা পরিষদ, পীরগঞ্জ পৌর মেয়র, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শ্রদ্ধা জানিয়েছে। পরে ড. ওয়াজেদ স্মৃতি সংসদ, এম.এ ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন, উপজেলা কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়া দুপুরে উপজেলা অডিটরিয়ামে প্রয়াত পরমাণুবিজ্ঞানীর স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ও পীরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
সভায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পীরগঞ্জ পৌরসভা মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায়, রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ছায়াদত হোসেন বকুল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম পিন্টু, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নুরুল আমিন রাজা।
এছাড়া জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সরকার দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী কর্মসূচিতে কোরআন তেলোয়াত, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি লালদিঘীর ফতেহপুরে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন।
তার পিতা মরহুম আব্দুল কাদের মিয়া ও মাতা মরহুমা ময়জুনেসা। চার পুত্র ও তিনকন্যার মধ্যে ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিও পীরগঞ্জ থানার হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন শেষে তিনি ১৯৫২ সালে রংপুর শহরের সরকারি জিলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৫৬ সালে ওই স্কুল থেকে ডিস্টিংশনসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬১-৬২ শিক্ষাবর্ষে হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার হন। ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগদান করেন।
১৯৬৩-৬৪ শিক্ষা বছরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে তাকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদস্থ করা হয়।
ওয়াজেদ মিয়া ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০০৯ সালের ৯ মে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান।
Leave a Reply